লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের একটি প্রদর্শনী প্লট হয়ে উঠেছে বিষমুক্ত সবজি চাষের উজ্জ্বল উদাহরণ। যেখানে রাসায়নিক নয়, ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়। ফলে কৃষকেরা দেখছেন স্বাস্থ্যকর সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।জানা যায়, মাসুদ আহমেদের প্রদর্শনী প্লটে প্রায় ১ একর জমিতে চাষ হয়েছে করলা, শসা, বরবটি, মুলাসহ নানা জাতের সবজি। আগাছা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়েছে মালচিং পদ্ধতি। পোকামাকড় দমনে বসানো হয়েছে ফেরোমন ফাঁদ। ক্ষেতে প্রবেশের আগে বাধ্যতামূলক হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও মাস্ক পরার নিয়ম মানছেন কৃষক-শ্রমিকেরা।
কৃষক মাসুদ বলেন, ‘প্রথমে ভাবিনি বিষ ছাড়া সবজি চাষ সম্ভব। কিন্তু এখন নিজের জমিতেই দেখছি কীভাবে এই পদ্ধতিতে ফসল হয়। ফলন ভালো হচ্ছে, বাজারেও দাম ভালো মিলবে আশা করছি।’মাসুদের দেখাদেখি আশপাশের কৃষকদের মাঝেও আগ্রহ বাড়ছে। কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রদর্শনী মাঠে কাজ করতে গিয়ে নতুন অনেক কিছু শিখেছি। আগের মতো ক্ষেতে বিষ দিই না বরং পরিবেশের ক্ষতি না করে ভালো ফলন তুলতে পারছি। লাভও হবে মনে হচ্ছে। নিজের ছেলেকেও বলেছি এই চাষ শিখতে।’ লালমনিরহাটের এই উদ্যোগ রংপুর বিভাগে নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেছে। বিষমুক্ত কৃষি শুধু একটি চাষপদ্ধতি নয়; এ যেন নতুন সচেতনতার আন্দোলন। যেখানে খাবার হয় ওষুধের মতো নিরাপদ আর কৃষক হন সুস্থ ভবিষ্যতের রূপকার।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উত্তম কৃষিচর্চার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে গ্যাপ বাংলাদেশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রংপুর বিভাগের ৩৫টি উপজেলায় ৪৫ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষ করছেন। প্রদর্শনীতে যুক্ত কৃষকদের দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের বীজ, জৈব উপকরণ, মালচিং সামগ্রী, ফেরোমন ফাঁদসহ সব কৃষি উপকরণ। নিয়মিত স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা কারিগরি পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। উত্তম কৃষিচর্চার পার্টনার প্রোগ্রাম রংপুর অঞ্চলের সিনিয়র মনিটরিং কর্মকর্তা অশোক কুমার রায় বলেন, ‘করলা, শসাসহ মোট ১০ জাতের সবজি এবং ৫ জাতের ফল নিয়ে প্রদর্শনীগুলো করা হচ্ছে। ২০২৮ সালের মধ্যে সারাদেশে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে নিরাপদ সবজি ও ফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাটের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন বলেন, ‘উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে উৎপাদিত এ সবজি শুধু পরিবেশবান্ধব নয় বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমরা চাই এমন চাষপদ্ধতি কৃষকের হাতে হাতে পৌঁছাক।’ লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘বিষমুক্ত খাদ্যব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে কৃষক, প্রশাসন ও সচেতন সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিরাপদ খাবারের প্রতি মানুষের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এ চাহিদা মেটাতে প্রান্তিক কৃষকদের প্রয়োজন সহায়তা ও প্রশিক্ষণ। সেদিকেই আমরা এগোচ্ছি।’
বাংলাস্কুপ/ প্রতিনিধি/এনআইএন